• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দুই যুগ ধরে বন্ধ তেঁতুলিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় 


সোহাগ হায়দার, পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ১১:৪০ এএম
দুই যুগ ধরে বন্ধ তেঁতুলিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় 

স্বাধীনতার তীর্থভূমি একাত্তরের মুক্তাঞ্চল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা। এই উপজেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাধায় প্রবেশ করতে না পারায় এই অঞ্চলকে মুক্তাঞ্চল বলা হয়। এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ভজনপুর, বুড়াবুড়ি ও দেবনগড় মিলে রয়েছে একটি আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কার্যালয়। প্রায় দুই যুগ ধরে তালা বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে কার্যালয়টি। দীর্ঘদিন ধরে অফিসে বসতে না পেরে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অবহেলা অযত্ন ও অপরিচ্ছন্নতায় কার্যালয়টির বেহাল দশা। এই অফিসে বসে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ৭১-এর গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও মিটিং করেছেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী, দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীদের উপস্থিতিতে ওই অফিস প্রতিদিন মুখরিত থাকতো। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দীর্ঘদিন অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে অফিসটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই অফিসটির সংস্কার করা হয়। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই বিএনপির সমর্থকরা এটি বন্ধ করে দেয়। নির্বাচনের পর স্থায়ীভাবে অফিসটি তালাবন্ধ করা হয়। যা আজো খোলা হয়নি।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম খাদেম আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে ভজনপুর বাজারে তৎকালীন জাতীয় সড়কের পাশে খাস জমিতে একটি অফিস গড়ে তোলেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হলে ঐ অফিসে বসে যুদ্ধের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন।

দেবনগড় ইউনিয়নের আতমাগছ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল হক বলেন, “এই অফিসটি বন্ধ থাকায় আমাদের দুঃখ লাগে। আমরা মিটিং ও বসার মত একটা অফিস পাই না। কী কারণে এমনটা হয়েছে তা আমরা বলতে পারছি না।”

একই ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এটি। আর এটিকে অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। আমরা এই অফিসটি চালু করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।”

ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর আলী বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি আসার পর তারা স্থায়ীভাবে অফিসটি বন্ধ করে দেয়। এর পর অফিসটি সেভাবে পড়ে আছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু অফিসটি খুলতে পারিনি।”

তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী মণ্ডল বলেন, “এই অফিসটি উদ্ধার করার জন্য আমাদের যা যা করার দরকার আমরা তা করবো।”

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজি মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, “যদি সকলের সহযোগিতা পাই তবে এই অফিসটিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারবো আমরা। একই সাথে ঐতিহ্যবাহী এই অফিসটির উন্নয়নে আমরা সব ধরণের কাজ করবো।”

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। এই মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়টি খোলার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এই অফিসটি নিয়ে যে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তা আমাদের জানালে আমরা সেই ব্যবস্থাও গ্রহণ করবো।”

Link copied!